সরকারের ন্যায্য কর আদায়ে “বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট” এর সাথে এনবিআর-এর কার্যকর অংশীদারিত্ব স্থাপনের বিষয়ে বাস্থই-এর নির্বাহী কমিটি কর্তৃক গঠিত টাস্কফোর্সের সদস্যবৃন্দ ২৭ মার্চ ২০২৩ তারিখ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (গ্রেড-১/ভ্যাট পলিসি) ও সদস্য (গ্রেড-১/ ইনকামট্যাক্স পলিসি) এর সাথে স্থাপত্য পেশা চর্চার ক্ষেত্রে বর্তমানে প্রযোজ্য ভ্যাট ও আয়কর আরোপের হার যৌক্তিকীকরন নিয়ে আলোচনা করেন।
বাস্থই-র পক্ষে আলোচনায় টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান স্থপতি মোঃ আনোয়ার হোসাইন (আনোয়ার সেলিম), সদস্যবৃন্দ স্থপতি মাহফুজুল হক জগলুল (সহ সভাপতি, আন্তর্জাতিক, বাস্থই), স্থপতি নুরুর রহমান খান, স্থপতি মোহাম্মদ ফয়েজ উল্লাহ, সদস্য-সচিব স্থপতি মীর নইয়ান সাকিব (কোষাধ্যক্ষ, বাস্থই) আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট ও এর সদস্যবৃন্দ উন্নত, আধুনিক ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
আলোচনায় বাস্থই প্রতিনিধিবৃন্দ নিন্মোক্ত বক্তব্য উপস্থাপন করেন :
সমাজের অগ্রসর অংশ হিসেবে স্থপতিবৃন্দ সর্বদাই রাষ্ট্রের আইন-কানুন ও সরকারের নিয়মনীতি পরিপালনে সদা সচেষ্ট। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্থানীয় সম্পদ সংগ্রহের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল মর্যাদাবান জাতি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করার কোন বিকল্প নাই। এজন্য যথাযথ কর আদায়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও সরকারী অপরাপর সংস্থার সাথে যৌথ অংশীদারিত্বের বিষয়ে বাংলাদেশ স্থপতি ইন্স্টিটিউট নিজেদের দায়বদ্ধ মনে করে।
উল্লেখ্য যে, বাস্থই একটি সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান। ইনস্টিটিউট ও তার সদস্যদের কার্যক্রম আইন ও বিধি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। স্থাপত্য চর্চার ক্ষেত্রে নৈতিকতা, জ্ঞান, পেশাদারিত্ব ও সামাজিক দায়িত্ববোধের নীরিখে স্থপতিদের পেশা চর্চার নিবন্ধন অর্জন করতে হয়।
বাংলাদেশী স্থপতিবৃন্দ ইতোমধ্যেই আধুনিক, যুগোপযোগী, টেকসই, নিরাপদ, পরিবেশবান্ধব ও নান্দনিক স্থাপনা সৃষ্টিতে অত্যন্ত প্রশংসনীয়ভাবে কাজ করে দেশ বিদেশে নিজেদের সামর্থ্য জানান দিয়ে চলেছেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশী স্থপতিদের নেতৃত্বের অবস্থান, অসংখ্য আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি এবং সাম্প্রতিককালে দ্রুত বিস্তারমান আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি অনন্য উচ্চতায় নিয়ে চলেছেন।
স্থাপত্য পেশাচর্চায় স্বীকৃতির জন্য দূরুহ মানসিক শ্রম ও মেধাচর্চার প্রয়োজন হয়। দেশের আবাসন, কর্মস্থল, বিনোদন ও সামাজিক কেন্দ্রসহ যাবতীয় নির্মাণকে আধুনিক, নান্দনিক, নিরাপদ, পরিবেশবান্ধব ও প্রযৌক্তিক বিচারে উৎকর্ষ নিশ্চিতকরণের কাজে স্থপতিগণ নেতৃত্বের অবস্থানে থাকেন।
সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন দেশে বন্যা, জলোচ্ছাস, ভূমিকম্পসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগে জীবন ও সম্পদের ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, জনঘনত্ব ও পরিবেশ দূষনে বিপর্যস্ত জনজীবনের কারনে দক্ষ প্রজুক্তিবিদ স্থপতি পেশাজীবীদের তত্ত্বাবধানে নির্মাণের গুরুত্ত্ব আমাদের দেশেও বিশেষভাবে আলোচিত হচ্ছে।
বর্তমানে স্থাপত্য পেশাজীবীদের সম্মানীতে উৎসে ১০℅ অগ্রীম আয়কর ও ১৫℅ মূল্য সংযোজন কর প্রদান বিধিত আছে। সমস্যা হচ্ছে ১৫℅ মূল্য সংযোজন কর প্রদানে সেবাগ্রহীতাদের অনীহা/অসহযোগিতা ও ফলাফল স্বরূপ অদক্ষ, আনাড়ি ও অপেশাদারদের মাধ্যমে বিপদজনক বাড়িঘর নির্মাণে যে কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয় সহনশীলতার ক্ষেত্রে ভয়ানক আশংকার সৃষ্টি হয়ে চলেছে। সেবাগ্রহীতাগণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই উচ্চ ভ্যাট হারের কারনে পেশাদার স্থপতিদের সার্ভিস এড়িয়ে চলছেন অথবা অনৈতিকভাবে সেবামূল্য কম দেখানোর জন্য চাপ প্রয়োগ করছেন যা মেনে নিলে সরকারের যথাযথ রাজস্ব আদায় বিঘ্নিত হওয়া সহ অনৈতিক চর্চার সুযোগ সৃষ্টি হয়।ভোক্তাগণ এক্ষেত্রে কোন প্রকার রেয়াত গ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। আরও উল্লেখ্য যে, বেসরকারী ও ব্যক্তিখাতের নির্মিতি সরকারী নির্মাণের তুলনায় বহুগুন বেশি।
সে বিবেচনায় বর্তমানে প্রচলিত ১৫℅ শতাংশ ভ্যাটের হার শতকরা ৫ বা ৭.৫ এ নামিয়ে আনা হলে সেটা ভোক্তাদের জন্য সহনীয় হবে এবং সরকার অনেক বেশি রাজস্ব আহরনে সক্ষম হবে বলে বংলাদেশ স্থপতি ইনসটিটিউট মনে করে।
অপরদিকে ১০% উৎসে আয়কর প্রদানের মতো করযোগ্য আয়ের সামর্থ্য বেশিরভাগ স্থপতিরই নেই। এজন্য অনেকেই ভীতিজনিত কারনে ট্যাক্স নেটের বাইরে থেকে যাচ্ছেন। তাতেও প্রাপ্য সরকারী রাজস্ব ঠিকমতো আদায় হচ্ছে না। এক্ষেত্রে আয় গোপন করার প্রবনতা তৈরী হচ্ছে। বর্ণিত কারনে উৎসে করহার কমিয়ে ৫% করা হলে অথবা স্থাপত্য পেশাগত আয়ের ক্ষেত্রে ১০% আয়করকে ফাইনাল সেটেলমেন্ট হিসেবে গ্রহণ করা হলে একদিকে সরকারের রাজস্ব আয় যেমন বাড়বে তেমনি এখাতে অর্জিত বিপুল অর্থ বৈধ ইকোনমিক চ্যানেলে চলে আসবে যা পরবর্তীতে অর্থকরী বিনিয়োগ উৎসাহিত করে রাজস্ব আয় বাড়াবে।
অংশীদারিত্বের প্রস্তাব হিসেবে প্রতিনিধিবৃন্দ নিম্নোক্ত বিষয়সমূহ উপস্থাপন করেছে:
ক. জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ভ্যাট ও আয়কর উইং থেকে উপযুক্ত কর্মকর্তাদের মাধ্যমে স্থপতিবৃন্দকে করদায়িতার বিষয়ে প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা গ্রহণ। বাস্থই এ ধরনের প্রশিক্ষনের যাবতীয় লজিস্টিক সাপোর্ট দিতে আগ্রহী।
খ. জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও আইএবি এর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন- যারা স্থাপত্য পেশাজীবীদের নিকট থেকে যথাযথ রাজস্ব আদায়ের সম্মিলিত উপায় উদ্ভাবন করবেন।
বাস্থই'র উপর্যুক্ত প্রস্তাবসমূহ আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে সদয় বিবেচনার জন্য বোর্ডের সদস্যগণকে অনুরোধ করা হয়।
রাজস্ব বোর্ডের নীতি-নির্ধারক উচ্চ-পদস্থ সদস্যবৃন্দ যথেষ্ট গুরুত্ব ও ধৈর্য্যসহকারে প্রতিনিধিবৃন্দের বক্তব্য শুনে বক্তব্যের সারবত্তা উপলব্দি করেন। কর-হার নির্ধারণের বিষয়টি বহুবিধ বিবেচনার সাথে সংশ্লিষ্ট জানিয়ে তাঁরা পরবর্তী কিছু পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতার মনোভাব প্রকাশ করেন।
Affiliations
Mailing Address
Contact